নিজস্ব প্রতিবেদক:: অনাড়ম্বর আয়োজনের মধ্য দিয়ে গোয়াইনঘাটে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কনিষ্ঠ পুত্র শেখ রাসেলের জন্মদিন পালন করা হয়েছে। গোয়াইনঘাট উপজেলা প্রশাসনের আয়োজনে “দীপ্ত জয়োল্লাস, অদম্য আত্মবিশ্বাস” এই পতিপাদ্যকে সামনে রেখে নানা কর্মসূচির মাধ্যমে দিবসটি পালন করে। ১৮অক্টোবর (সোমবার) সকাল ১০ টা গোয়াইনঘাট উপজেলা প্রশাসনিক ভবনের সামনে নির্মিত শেখ রাসেলের অস্থায়ী প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হয়। গোয়াইনঘাট উপজেলা প্রশাসন,গোয়াইনঘাট উপজেলা পরিষদ, গোয়াইনঘাট থানা, গোয়াইনঘাট উপজেলা আওয়ামী লীগ, উপজেলা মুক্তি যোদ্ধা কমান্ড, গোয়াইনঘাট প্রেসক্লাব,গোয়াইনঘাট সরকারি কলেজ, গোয়াইনঘাট সরকারি মডেল উচ্চবিদ্যালয়, গোয়াইনঘাট উপজেলা যুবলীগ, লেঙ্গুড়া সরকারি উচ্চবিদ্যালয়সহ বিভিন্ন সামাজিক ও রাজনৈতিক সংগঠন পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। সকাল ১১টায় গোয়াইনঘাট উপজেলা প্রশাসনের আয়োজনে উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হয়।
শেখ রাসেলের জন্মদিন দিন উপলক্ষে আলোচনা সভায় গোয়াইনঘাট উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো: তাহমিলুর রহমানের সভাপতিত্বে ও সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে গোয়াইনঘাট উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ ফারুক আহমদ বলেন ১৯৬৪ সালে হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী মৃত্যুর পর আওয়ামী লীগকে পুনর্জীবিত করে তোলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। স্বৈরাচার আইয়ুববিরোধী আন্দোলন এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতার চূড়ান্ত পটভূমি তৈরির জন্য দেশজুড়ে তখন জনসংযোগে ব্যস্ত সময় পার করছিলেন তিনি। অন্যদিকে বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের তত্ত্বাবধানে ধানমন্ডির ৩২নম্বর সড়কেও চলছিল পরিবারের মাথা গোঁজার জন্য একটি বাড়ি নির্মাণের কাজ। এমন এক কর্মমুখর সময়ে সবার মনোযোগের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠলো এক নবোজাত। ১৯৬৪ সালের ১৮অক্টোবর কার্তিকের প্রথম দিবস চারপাশে হেমন্তের সুবাস ছড়িয়ে জন্ম নিলো শেখ রাসেল। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও বঙ্গমাতা ফজিলাতুন্নেচ্ছা বেগমের সর্বকনিষ্ঠ সন্তান। বঙ্গমাতার গর্ভে যে-সময়টায় বেড়ে উঠছিল শেখ রাসেল, সেই সময়জুড়ে সারা দেশে আওয়ামী লীগকে নতুন করে সংগঠিত করেন বঙ্গবন্ধু। কী কাকতালীয়, অথচ কতো অনুপম এক যুগল যাত্রা। স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে বিদেশ ভ্রমণের সময়, বিশ্বনেতাদের সঙ্গে যেভাবে শুভেচ্ছা বিনিময় করতো ছোট্ট রাসেল যে মেধা আত্মবিশ্বাস ও ব্যক্তিত্ব বিচ্ছুরিত হতো তার চোখে-মুখে, তার পোশাক এবং আদব-কায়দায় তা এক ব্যতিক্রমী দৃষ্টান্ত। সামাজ্যবাদবিরোধী ও অহিংসতার জন্য জগৎবিখ্যাত দার্শনিক, বার্ট্রান্ড উইলিয়াম রাসেলের নামের সঙ্গে মিলিয়ে বঙ্গবন্ধু পরিবারের কনিষ্ঠ সদস্যের নাম রাখা হয়েছিল- শেখ রাসেল। ছেলে বড় হয়ে এক মানবিক আদর্শের প্রতীকে পরিণত হোক, তাই হয়তো চেয়েছিলেন পিতা শেখ মুজিব ও মাতা ফজিলাতুন্নেচ্ছা। বড় দুই বোন- শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা এবং দুই ভাই- শেখ কামাল ও শেখ জামালের আদরে আদরে শুরু হয় রাসেলের জীবনের পথ চলা।
আস্তে আস্তে বেড়ে উঠতে শুরু করলো ছোট্ট রাসেল। কিন্তু এই কুসুমিত কোমল হৃদয়ে পায়রার ঝাঁক ডানা মেলার আগেই শুরু হয় তুমুল ঝড়-ঝাপটা। ১৯৬৬ সালে বাঙালির বাঁচার দাবি ‘ছয় দফা’ ঘোষণা করেন বঙ্গবন্ধু। আলোড়ন শুরু হয় দেশের প্রতিটি অঞ্চলে। ভয় পেয়ে যায় পাকিস্তানি সামরিক জান্তারা। বঙ্গবন্ধুকে গ্রেফতার করে জেলে রাখে তারা। ততদিনে একটু একটু করে হাঁটতে শিখেছে রাসেল। আধো আধো বুলিও ফুটেছে মুখে। এ-ঘর ও-ঘর করে বাবাকে খুঁজে ফেরে সে। কখনো কখনো মাকেও পায় না খুঁজে। বঙ্গবন্ধুর মামলা-মোকদ্দমা সামলানো এবং আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগ নেতৃকর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ ঠিক রেখে আন্দোলন সংগ্রাম চালাতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন বেগম ফজিলাতুন্নেচ্ছা মুজিব। বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনাও তখন কলেজের রাজনীতিতে সক্রিয়। কিছুক্ষণ বাবার গলা জড়িয়ে ধরার জন্য, ছোট্ট রাসেলকে তাই অন্যদের সঙ্গে জেলের গেটে যেতে হতো। আর ফিরতে চাইতো না সে, নামতে চাইতো না কোল থেকে। কিন্তু ১৯৬৮ সালে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার পর সেই দেখার সুযোগও বন্ধ হয়ে যায়। অবশেষে নিজের আম্মাকেই ‘আব্বা’ বলে ডেকে হৃদয়ের ক্ষত নিরাময়ের চেষ্টা করতো রাসেল। আলোচনা সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন গোয়াইনঘাট থানার অফিসার ইনচার্জ পরিমল চন্দ্র দেব, গোয়াইনঘাট উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোঃ সুলতান আলী, গোয়াইনঘাট প্রেসক্লাব সভাপতি এম এ মতিন, গোয়াইনঘাট উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সুভাস চন্দ্র পাল ছানা, গোয়াইনঘাট উপজেলা মুক্তি যোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হক। এসময় উপস্থিত ছিলেন গোয়াইনঘাট উপজেলা আওয়ামী যুবলীগের আহবায়ক ফারুক আহমদ, যুগ্ম আহবায়ক শাহাবুদ্দিন, গোয়াইনঘাট সরকারি মডেল উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষা মোঃ সেলিমউ্যালাহ,সিনিয়র শিক্ষক দেবব্রত ভট্টাচার্য, ইমরান আহমদ বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সুলেমান, গোয়াইনঘাট প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি মনজুর আহমদ, আব্দুল মালিক প্রমুখ।
