ডেইলি গোয়াইনঘাট ডেস্ক :: চৈত্রের শেষের দিকে আকস্মিক বৃষ্টি আর পাহাড়ি ঢলে গোয়াইনঘাটের ইটভাটার ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। সোমবার (৩এপ্রিল) রাতের প্রচন্ড বৃষ্টিতে সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার ৩টি ইট ভাটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এতে ভাটার খলিয়ানে থাকা বেশিরভাগ কাঁচা ইট নষ্ট হয়ে গেছে সেই সাথে পাহাড়ি ঢলে তলিয়ে গেছে ইট পাকাকরনের চুলাটিও। পাহাড়ী ঢল এবং অতিবৃষ্টিতে ৩টি ইটভাটায় প্রায় ১কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছেন ভাটার মালিকরা।পরিবেশবান্ধব ও স্থায়ী চিমনির ৩টি ইটভাটা প্রতি বছর ভাটা প্রতি ৭০থেকে ৮০লাখ ইট পোড়ানো হয় এসব ইটভাটায়। গত সোমবারের আগের দিন পর্যন্ত এ তিনটি ইটভাটায় পোড়ানোর অপেক্ষায় তৈরি প্রায় দেড় কোটি কাঁচা ইট বৃষ্টি আর আকস্মিক পাহাড়ি ঢলের পানিতে গলে গেছে। প্রতিটি ইট তৈরিতে খরচ হয় ৪/৫ টাকা। সপ্তাহজুড়ে দফায় দফায় বৃষ্টি হলে (৪এপ্রিল) সোমবার বিকেলে আনুমানিক ৪টায় আকষ্মিক মেঘালয় থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে গোয়াইনঘাট উপজেলা এবং পার্শ্ববর্তী উপজেলা জৈন্তাপুরের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে শত শত হেক্টর জমিতে রূপায়িত বোরোধানের ক্ষতির অন্ত নেই। সেই সাথে ইটভাটায় থাকা কাঁচা ইটগুলো বৃষ্টি আর আকস্মিক পাহাড়ি ঢলে নরম হয়ে পূনরায় মাটিতে পরিনত হয়েছে। সোমবার ভোর থেকে বিকেল পর্যন্ত বিভিন্ন এলাকায় কয়েক দফা বৃষ্টি হয়। বৃষ্টিতে ইটভাটায় পোড়ানোর অপেক্ষায় খলিয়ানে থাকা কাঁচা ইট গলে নষ্ট হয়েছে। অনেক আধা শুকনা ইটে বৃষ্টির পানিতে দাগ পড়েছে।ভাটাগুলোতে কোনো পূর্ব প্রস্তুতি না থাকায় খলিয়ানে থাকা ঐসব ইট রক্ষা করা সম্ভব হয়নি। তবে পলিথিন দিয়ে ঢেকে রাখায় কিছু ইট বৃষ্টি থেকে রক্ষা হলেও পাহাড়ি ঢল থেকে রক্ষা করা যায়নি। ভাটা মালিকরা বলেছেন, বৃষ্টির পানিতে কাঁচা ইট নষ্ট হয়ে যাওয়ায় এখন তাদের অতিরিক্ত টাকা গুনতে হবে। নষ্ট ইটগুলো আঙিনা থেকে সরিয়ে পুনরায় পানি দিয়ে নরম করে ইট তৈরি করতে হবে। এতে সময় শ্রম ও অর্থ সবদিক থেকেই তারা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন।
হঠাৎ পাহাড়ি ঢল আর বৃষ্টিতে কাদায় পরিণত দেড় কোটি টাকার কাঁচা ইট সরেজমিন দেখতে মঙ্গলবার (৫এপ্রিল) গোয়াইনঘাট উপজেলার ৫নং পূর্ব আলীরগাঁও ইউনিয়নস্থ উত্তরা ব্রিক ফিল্ডে গিয়ে দেখা যায়, খলিয়ানে শুকানোর জন্য প্রস্তুত করে রাখা কাঁচা ইট আকষ্মিক বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে। ইটগুলো গলে কাদা হয়ে গেছে। কিছু কাঁচা ইট খামাল (জড়ো করে) করে পলিথিন দিয়ে ঢেকে রাখা হয়েছে। এছাড়া চুল্লিতে পোড়ানোর জন্য সাজানো ইটও গলে গেছে।
উত্তরা ব্রীক ফিল্ডের মালিক আলহাজ্ব গোলাম কিবরিয়া হেলাল ও মোঃ অহিদ মিয়া জানান, অকাল বন্যার কারণে ২দিন থেকে আমাদের ইটভাটায় কর্মরত ১৫০শ্রমিকের কাজ বন্ধ রয়েছে। বর্তমানে ইটভাটার অধিকাংশ জায়গা পানির নিচে থাকায় শ্রমিকের কাজ বন্ধ রয়েছে। বন্যার পানি না কমলে শ্রমিক এবং ইটাভাটা নিয়ে শংকায় রয়েছেন মালিকদ্বয়। তারা আরও জানান, আকষ্মিক পাহাড়ি ঢলে সৃষ্ট বন্যায় উত্তরা ব্রিক ফিল্ডে ৪০লক্ষ টাকার ক্ষতি হয়েছে।
নবগঠিত গোয়াইনঘাট সদর ইউনিয়নস্থ তিতারাই মেসার্স অলিম্পিক ব্রিক ফিল্ড-১, অলিম্পিক ব্রিক ফিল্ড-২’র মালিক আলহাজ্ব মোঃ কালা মিয়া বলেন, খলিয়ানে থাকা কাঁচা ইটে পলিথিন দিয়ে ঢাকা সম্ভব হয়নি। বৃষ্টি এবং পাহাড়ি ঢলে খলিয়ানে থাকা সকল কাঁচা ইট নষ্ট হয়ে কাদা হয়ে গেছে। এতে কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। এসব মাটি খলিয়ান থেকে সরিয়ে আবারও শোধন করে ইট তৈরি করতে বাড়তি টাকা খরচ হবে। তিনি আরও বলেন, গত দু-দিন থেকে শ্রমিকদের বসে বসে মজুরি ও খাবারদাবার দিতে হচ্ছে। প্রতিদিন ১০/১৫ হাজার টাকার বাজার খরচ দিতে হচ্ছে। সে হিসাবে ৩/৪দিন (খলিয়ান শুকাতে আরও কয়েকদিন লাগবে। মজুরিসহ খরচ হবে প্রায় ২লাখ টাকা। হঠাৎ বৃষ্টি এবং পাহাড়ী ঢলে প্রায় এক কোটি টাকা লোকসান হবে বলে জানান তিনি। এদিকে উপজেলার ৭নং নন্দীরগাঁও ইউনিয়নে আরোও ৪/৫টি ইটভাটা থাকলেও চলমান পাহাড়ি ঢলের কোন প্রভাব না পড়ায় সেখানে কোন ক্ষয়ক্ষতি না হলেও অতিবৃষ্টির কারণে সবকটি ইটভাটায় কিছুটা ক্ষতি সাধন হয়েছে বলে জানা গেছে।
