ডেইলি গোয়াইনঘাট ডেস্ক :: সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলায় উন্মুক্ত জায়গায় মলত্যাগ বন্ধে এখনো উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জিত হচ্ছেনা। নেই উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের কার্যকরী পদক্ষেপ। উপজেলার এনজিও সংস্থাগুলো তাদের কার্যক্রম রেখেছে কাগজ ও কলমে বন্দী। যার কারণে এই উপজেলায় স্বাস্থ্যকর পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা নিশ্চিত করা চ্যালেঞ্জ হয়েছে। গোয়াইনঘাট উপজেলায় ৯০দশক থেকে সরকারের পাশাপাশি বিভিন্ন এনজিও নিরাপদ পানি, স্যানিটেশন ও স্বাস্থ্যবিধির উন্নয়নে কাজ করছে। কিন্তু অধিকাংশ বেসরকারি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা (এনজিও) কাগজ ও কলমে পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থার অগ্রতি দেখিয়ে তাদের প্রকল্পের সমাপ্তি ঠেনেছেন। একটি এনজিওর চলমান প্রকল্পের সমাপ্তীলগ্নে অন্য এনজিওটির সার্ভে কাজ শুরু হয়ে থাকে। এসময় নতুন এনজিওটির অবহিত করন সভায় সার্ভের ফলাফল উপস্থাপন করলে সমাপ্তি হওয়া এনজিও প্রতিষ্টানটির ধোঁকাবাজির বিষয়টি একদম পরিষ্কার হয়ে যায়। ফলে উপজেলার সিংহভাগ মানুষের মৌলিক পরিচ্ছন্নতা বা হাইজিন সম্পর্কে যথাযথ ধারণা নেই।
পরিচ্ছন্নতার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ ঠিকমতো হাত ধোওয়ার অভ্যাস এখনো পুরোপুরি স্থাপিত হয়নি। প্রতি পাঁচটি পরিবারের মধ্যে দুটি পরিবার শিশুর মলমূত্র ঠিকমতো সরিয়ে ফেলা হলেও বাকিদের নেই কোন তৎপরতা। অথচ মলমূত্রের নিরাপদ ব্যবস্থাপনা না হলে অসুস্থতার ঝুঁকি থাকে, এমনকি শিশুর মৃত্যু হতে পারে। যেখানে হাজার হাজার পরিবার মাটির গর্ত করে তৈরি করে টয়লেট হিসেবে ব্যাবহার করে থাকেন। অস্বাস্থ্যকর এবং ঢাকনা বিহীন দূষিত পরিবেশের ল্যাট্রিন গ্রামে গ্রামে পাড়া মহল্লায় চোখে পড়ে। পয়ঃনিষ্কাশনের সঙ্গে শিশুর ডায়রিয়া ও খর্বকায়ত্বের সরাসরি সম্পর্ক রয়েছে। অনুন্নত পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থার কারণে ডায়রিয়া প্রদাহ ও কৃমির মতো সমস্যা দেখা দেয়। প্রতিবন্ধী শিশুদের ব্যবহার উপযোগী পয়ঃনিষ্কাশন অবকাঠামোর অভাব রয়েছে। ধনী-দারিদ্র ভেদে পয়ঃনিষ্কাশন সুবিধা প্রাপ্তির ক্ষেত্রে ভিন্নতা রয়েছে।
অপরদিকে এ উপজেলার মেয়েদের মধ্যে ঋতুকালীন পরিচ্ছন্নতার জ্ঞান ও চর্চায় এখনো ঘাটতি রয়েছে। কিশোরীরা তার প্রথম ঋতু¯্রাবের বিষয়টি সম্পর্কে পুরোপুরি অবগত নয়। মেয়েদের ঋতুকালে স্যানিটারি প্যাড ব্যবহারে রয়েছে ব্যাপক সচেতনতার অভাব। জলবায়ু পরিবর্তন, পাহাড়ি ঢল, জনসংখ্যা বৃদ্ধি এই সমন্বিত প্রভাবে পরিবেশ বিপর্যয়ের ঝুঁকিতে রয়েছে গোয়াইনঘাট উপজেলা। এখানে ঘনঘন বন্যা ও ঘূর্ণিঝড়ের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগে পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা নষ্ট হয়ে যায়। এতে টয়লেট উপচে নোংরা ছড়িয়ে খাবার পানির বিভিন্ন উৎস দূষিত হয়। বাংলাদেশে স্বাস্থ্যমত পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা ও পরিচ্ছন্নতার ঘাটতির কারণে বছরে ৪২০কোটি ডলার ক্ষতি হয়। এই অর্থ বাংলাদেশের জিডিপির ৬দশমিক ৩শতাংশের সমান। এছাড়াও মাত্র ২২শতাংশ স্কুলে মেয়েদের জন্য আলাদা টয়লেট আছে। তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রে নেই গোপনীয়তা রক্ষার সুযোগ। জরুরি পরিস্থিতিতে যখন শিশু ও কিশোর-কিশোরীরা সবচেয়ে নাজুক ও ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় থাকে তখন তাদের নিরাপদ স্যানিটেশন ও হাইজিন সেবা দিতে এশিয়া আর্সেনিক নেটওয়ার্কের কোন ভূমিকা নেই। শহর ও গ্রামাঞ্চলের পাড়া-মহল্লার পাশাপাশি স্বাস্থ্য ও শিক্ষাসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে নিরাপদ পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা ও হাইজিন সেবার জন্য প্রয়োজনীয় অবকাঠামো ও সচেতনতা বৃদ্ধিতে কাজ করাএখন সময়ের দাবী। অনিরাপদভাবে আশপাশে মল ছড়ানো রোধ এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক, টেকসই ও সবাই সমান সুযোগ পায়, এমন পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা গড়ে স্যানিটেশন ব্যাবস্থা নিশ্চিত করতে হবে।
সরেজমিনে জানা যায়, নিরাপদ পানি, স্বাস্থ্য সম্মত পায়খানা ও স্বাস্থ্যবিধির উন্নয়নে গোয়াইনঘাট উপজেলায় ডজনখানেক এনজিও যুগ যুগ ধরে এ উপজেলায় কাজ করে আসছে। সরকারের পাশাপাশি দুই যুগের অধিক সময় ধরে এনজিও গুলো বিভিন্ন নামে স্যানিটেশন প্রকল্প বাস্তবায়ন করে চলছে। তবুও উক্ত বিষয়ের কাঙ্খিত ফলাফল পাওয়া যায়নি কনসার্ন, ভার্ড, আশা, ব্রাক, ওয়াটার এইড, এফআইবিডিবি, ওয়ার্ল্ড ভিশন, জৈন্তিয়া ছিন্নমূল সংস্থা (জেসিস), সিলেট যুব একাডেমি ও এশিয়া আর্সেনিক নেটওয়ার্কসহ ১৩/১৪ টি এনজিও সংস্থা শুধু মাত্র গোয়াইনঘাট উপজেলায় উক্ত বিষয়ে দীর্ঘদিন থেকে প্রকল্প বাস্থবায়ন করে চলছে। এছাড়া ভার্ড, ব্রাক ও ওয়ার্ল্ড ভিশনের পক্ষ থেকে গোয়াইনঘাট উপজেলায় কয়েক হাজার রিংস্লাব ও ল্যাট্রিন ভিতরণ করা হয়েছে। ঐসব এনজিওর মধ্যে এশিয়া আর্সেনিক নেটওয়ার্ক ছাড়া বাকি সংস্থা গুলো মোটামুটি ভাবে তাদের প্রকল্প বাস্তবায়নের লক্ষ্যে কাজ করছে। কিন্তু এশিয়া আর্সেনিক নেটওয়ার্ক গোয়াইনঘাট উপজেলাবাসীর সাথে পুরোপুরি নাটকীয়তার সাথে তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করছে। অনুসন্ধানে জানা যায়, ওয়ার্ল্ড ভিশন, ভার্ড,ও ব্রাকসহ বিভিন্ন এনজিও সংস্থার বিতরণকৃত ল্যাট্রিনকে আর্সেনিক নেটওয়ার্কের কর্মীরা তাদের মাধ্যমে স্থাপিত হয়েছে এবং প্রতিমাসে কাগজে কলমে রিপোর্ট তৈরি করে বেতন ভাতা উত্তোলন করছেন। অপর দিকে এশিয়া আর্সেনিক নেটওয়ার্ক গোয়াইনঘাট উপজেলায় ওয়াশ নামে যে প্রকল্প বাস্থবায়নে কাজ করছে তার কোন হাদিস খোঁজে পাওয়া যাচ্ছেনা। সেই সাথে স্বাস্থ্যবিধি আচরণের পরিবর্তন, কমিউনিটিতে নতুন ল্যাট্রিন স্থাপন ও অস্বাস্থ্যকর ল্যাট্রিন থেকে স্বাস্থ্যকর ল্যাট্রিন স্থাপন কোন ভাবেই মাঠে কার্যকর হচ্ছেনা।
এ ব্যাপারে এশিয়া আর্সেনিক নেটওয়ার্ক গোয়াইনঘাট উপজেলা ম্যানেজার হাসান মাহমুদ প্রতিবেদককে বলেন, অস্বাস্থ্যকর ল্যাট্রিন থেকে ৫হাজার একশতটি এবং নতুন ৭০০টি ল্যাট্রিন স্থাপন করেছেন। অন্যান্য এনজিও সংস্থার স্থাপিত ও বিতরণকৃত ল্যাট্রিনের বিষয়ে তাদের কর্মীর দেয়া রিপোর্টকে অস্বাস্থ্যকর ল্যাট্রিন থেকে স্বাস্থ্যকর করেছেন বলে তিনি দাবি করেন।