ডেইলি গোয়াইনঘাট ডেস্ক:: ২০২২ সালের মধ্যে জলাতঙ্ক নির্মূলের লক্ষ্যে গোয়াইনঘাটে ব্যাপক হারে কুকুরের মধ্যে টিকাদান কার্যক্রম সফল করার লক্ষ্যে। এক অবহিতকরণ সভা মঙ্গলবার (১৬ফেব্রয়ারী) সকাল ১১টায় গোয়াইনঘাট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের হলরুমে অনুষ্ঠিত হয়েছে।উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাক্তার রেহান উদ্দিনের সভাপতিত্বে ও স্বাস্থ্য পরিদর্শক নিখিল দাসের সঞ্চালনায় অবহিতকরণ সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন-গোয়াইনঘাট উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান মোছাৎ আফিয়া বেগম, সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান মাওলানা গোলাম আম্বিয়া কয়েছ, ডাক্তার মোঃ খালেদুর রহমান চৌধুরী, ডাক্তার মোঃ আব্দুল্লাহ আল মামুন, জাকির হোসেন, মনিরুল ইসলাম, রিপন আহমদ, আবদুল হামিদ, আনিমা চক্রবর্তী, মোশাররফ হোসেন, এসআই জুনেল, দেবব্রত ধর, প্রনজিৎ পালসহ স্বাস্থ্য বিভাগের বিভিন্ন কর্মকর্তা-কর্মচারীবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
সভাপতির বক্তব্যে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাক্তার রেহান উদ্দিন বলেন, জলাতঙ্ক ভাইরাসজনিত মারাত্মক সংক্রামক রোগ। মূলত কুকুরের কামড় বা আঁচড়ে এ রোগ ছড়ায়। এই রোগকে হাইড্রোফোবিয়া বা পাগলা রোগও বলা হয়। এ রোগে আক্রান্ত ব্যক্তি পানি দেখলেই আতংক হয়ে পড়ে। বাংলাদেশে প্রতিবছর জলাতঙ্ক রোগে বহু মানুষ মারা যায়। কুকুরকে টিকা দেওয়ার মাধ্যমে জলাতঙ্ক রোগের বিস্তার পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। সরকারের পক্ষ থেকে ২০২২ সালের মধ্যে দেশ থেকে জলাতঙ্ক রোগ নির্মূলের অংশ হিসেবে কুকুরকে টিকা দেওয়ার যে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে তা নিঃসন্দেহে সময়োপযোগী। অতীতে বর্বর কায়দায় কুকুর নিধন করা হতো। এভাবে কুকুর নিধনের বিষয়ে উচ্চ আদালতের নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। পাশাপাশি প্রাণীর প্রতি নিষ্ঠুরতা দূর করতে প্রাণী কল্যাণ আইন কার্যকর হওয়ায় এর কোনো সুযোগ নেই। ফলে কুকুর নিয়ন্ত্রণ ও প্রাণীটি যাতে কোনোভাবেই জনস্বাস্থ্য ও জনদুর্ভোগের কারণ না হয় সেদিকে মনোযোগ জরুরি হয়ে পড়েছে। কুকুরকে টিকা দেওয়ার মাধ্যমে সহজেই এই পরিস্থিতি সামাল দেওয়া যায়। তবে কুকুরকে শুধু জলাতঙ্ক রোগের টিকা দেওয়ার পাশাপাশি তাদের বন্ধ্যা করার কার্যক্রমও জোরদার করতে হবে। কুকুরের সংখ্যা নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য এটা জরুরি তা না হলে কুকুরের বংশ বৃদ্ধি ঘটতেই থাকবে। যা জলাতঙ্ক দূর করার টিকাদান কর্মসূচিকে ব্যাহত করতে পারে। একটি এলাকায় কুকুরের সংখ্যা বেশি হয়ে গেলে খাবারের অভাব ও ভারসাম্যের সংকট দেখা দিতে পারে। ফলে স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোর উচিত প্রাণী কল্যাণ নিয়ে কাজ করে—এমন সংগঠনগুলোকে সম্পৃক্ত করে সমন্বিত পদক্ষেপ নেওয়া। উন্নত বিশ্বে বেওয়ারিশ বা পথ-কুকুরদের বিভিন্ন প্রশিক্ষণের মাধ্যমে সামাজিক ও নিরাপত্তা কার্যক্রমে সম্পৃক্ত করা হয়। বাংলাদেশেও এ ধরনের উদ্যোগ নেওয়া যেতে পারে। এভাবে বেওয়ারিশ কুকুরেরাও প্রয়োজনীয় হয়ে উঠতে পারে। সংসদে পাস হওয়া ‘প্রাণী কল্যাণ আইন, ২০১৯ অনুযায়ী কোনো প্রাণী হত্যা করলে ছয় মাসের জেল অথবা ১০ হাজার টাকা জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে। এই আইনের যথাযথ প্রয়োগ নিশ্চিত করা গেলে প্রাণীর প্রতি যেকোনো ধরনের নিষ্ঠুরতা মোকাবিলা করা সম্ভব। চুয়াডাঙ্গায় কুকুরকে টিকা দেওয়ার যে কর্মসূচি চালু হয়েছে, তা সারা দেশে কার্যকর করা গেলে কুকুরের প্রতি নিষ্ঠুরতা যেমন কমে আসবে, তেমনি জনগণও জলাতঙ্ক রোগের বিপদ থেকে মুক্ত থাকবে।
মুক্ত আলোচনায় বক্তারা বলেন, দেশ হতে জলাতঙ্ক রোগ নির্মূল করতে সরকার সর্বাত্মক ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে আর তারই অংশ হিসেবে গোয়াইনঘাট উপজেলায় আগামী ১৯ফেব্রয়ারী থেকে ২৩ফেব্রয়ারী পর্যন্ত উপজেলার সব কয়েকটি পাড়া-মহল্লায় থাকা বেওয়ারিশ কুকুর গুলোকে জলাতঙ্ক রোগের টিকা প্রদান করা হবে।