গোয়াইনঘাট প্রতিনিধি:: সিলেটের গোয়াইনঘাটে শিশুর প্রতি সকল প্রকার সহিংসতা ও জেন্ডার ভিত্তিক বৈষম্য দূরীকরণে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা ও পরিষেবা প্রদানকারীদের সাথে মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।বৃহস্পতিবার সকাল ১১টায় গোয়াইনঘাট থানায় নবনির্মিত অফিসার ফোর্সদের মিলনায়তনে গোয়াইনঘাট এপি, ওয়ার্ল্ড ভিশন বাংলাদেশ’র আয়োজনে মতবিনিময় সভায় ওয়ার্ল্ড ভিশন গোয়াইনঘাট’র প্রোগ্রাম অফিসার শহীদুল ইসলামের পরিচালনায় সভাপতির বক্তব্যে গোয়াইনঘাট থানার অফিসার ইনচার্জ পরিমল চন্দ্র দেব বলেন, জেন্ডারভিত্তিক সহিংসতা প্রতিরোধ, ধর্ষণ বন্ধ করা এবং আইনানুগ শাস্তির জন্য মানবাধিকারকর্মী, নারী আন্দোলনকর্মী ও শিক্ষাবিদেরা জোরালো বক্তব্য দিয়েছেন। যৌন হয়রানি ও জেন্ডারভিত্তিক সহিংসতা সমাজের প্রতিটি মানুষের জীবনের জন্য হুমকিস্বরূপ এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের চরম রূপ। যৌন হয়রানি ও জেন্ডারভিত্তিক সহিংসতা প্রতিরোধে বাংলাদেশ বহু উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। যেসব আচরণ ও মনোভাব জেন্ডারবৈষম্য এবং কন্যাশিশু ও নারীর প্রতি সহিংসতাকে উৎসাহিত করে, বর্তমানে জাতিসংঘ ও অন্যান্য উন্নয়ন সহযোগী প্রতিষ্ঠান সেসব আচরণ ও মনোভাব পরিবর্তনের জন্য নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। জেন্ডারভিত্তিক সহিংসতা প্রতিরোধে ও ধর্ষণের সঠিক কারণসমূহ চিহ্নিত ও গভীরভাবে অনুধাবন করতে সক্ষম না হলে এর প্রতিরোধে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়াও সম্ভব হবে না।
মতবিনিময় সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্যে গোয়াইনঘাট থানার অফিসার ইনচার্জ (তদন্ত) উমর ফারুক মোড়ল বলেন, সহিংসতা ও ধর্ষণের জন্য কোনোভাবেই নারী দায়ী নয়। বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশে খুবই উদ্বেগজনক বিষয় হচ্ছে ধর্ষণের শিকার নারীকে ন্যায়বিচার ও সুরক্ষা দেওয়ার বদলে আদালতে তার শ্লীলতা ও চরিত্র নিয়ে বিশ্লেষণ করা হয়। ধর্ষণের শিকার নারীকে প্রকাশ্যে তার চরিত্র ও ঘটনার পেছনে তার উদ্দেশ্য সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়, যা নারীর জন্য চরম অবমাননাকর এবং এর মাধ্যমে আরেক দফায় তার মানবাধিকার লঙ্ঘন করা হয়। কোনো অবস্থাতেই ধর্ষণের শিকার নারীকে তার আচরণ, পোশাক, কথা বলা বা হাঁটার ধরন নিয়ে দোষারোপ করা যাবে না এর দায় শুধু ধর্ষকের। কিন্তু জেন্ডারভিত্তিক সহিংসতা ও ধর্ষণ একমাত্র অপরাধ, যেখানে প্রায়ই অপরাধীর বিচার না করে সমাজ ভুক্তভোগীকে দায়ী সাব্যস্ত করে। প্রচলিত রীতিনীতি এবং নারী-পুরুষের চিন্তা ও আচরণের ধরন পরিবর্তনের মাধ্যমে ভুক্তভোগীকে দোষারোপ করা ও সহিংসতাকে স্বাভাবিকভাবে দেখার প্রবণতা রোধ করা সম্ভব। যখন আমরা জেন্ডারভিত্তিক সহিংসতা ও ধর্ষণ প্রতিরোধে কাজ করি, তখন নির্যাতনের শিকার নারীকে আমাদের এমনভাবে প্রাথমিক সেবা দিতে হবে, যাতে সে সমন্বিতভাবে একসঙ্গে মানসিক, চিকিৎসা, শারীরিক, কাউন্সেলিং আইনি সেবা পায়। নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে পুরুষালি আচরণ সম্পর্কে যে ভুল ধারণাগুলো পুরুষের মধ্যে বিদ্যমান, নারী-পুরুষের বৈষম্য এবং নারীদের নীচু করে দেখার যে মনোভাব, সেগুলোকে ভাঙতে হবে। তিনি আরও বলেন, মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয় ওয়ান–স্টপ ক্রাইসিস সেন্টার এবং ২৪ ঘণ্টা জাতীয় হেল্পলাইন সেবা চালু করেছে। সম্প্রতি জাতিসংঘ স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অধীন সেবা প্রদানকারীদের জন্য জেন্ডারভিত্তিক সহিংসতা ও ধর্ষণের শিকার নারীদের সেবা ব্যবস্থাপনা–সম্পর্কিত প্রশিক্ষণ কর্মসূচি চালু করেছে। সরকারি হাসপাতালগুলো যাতে জেন্ডারভিত্তিক সহিংসতায় দ্রুত সাড়া দেয় এবং সেবা প্রদানকারীরা যাতে ধর্ষণের শিকার নারীকে তাৎক্ষণিক ও প্রয়োজনীয় সেবা দক্ষভাবে দিতে পারে, সে জন্য স্বাস্থ্যসেবা খাতকে আরও তৎপর হয়ে কাজ করতে হবে। একই সঙ্গে জেন্ডারভিত্তিক সহিংসতার শিকার সবার জন্য আইনি সেবা ও সুরক্ষা বৃদ্ধির জন্য সর্বত্র সহজপ্রাপ্য করা আবশ্যক, যাতে যার যখন প্রয়োজন, তখনই সেবা নিতে পারে।
মতবিনিময় সভায় এসময় উপস্থিত ছিলেন ওয়ার্ল্ড ভিশন’র গোয়াইনঘাট উপজেলা প্রোগ্রাম অফিসার ঝলমল মারিয়া খংস্থিয়া, গোয়াইনঘাট থানার এসআই লিটন রায়, এসআই মতিউর রহমান, এএসআই দিবাস দাস, এএসআই নুরুল আমিন, এএসআই জামাল উদ্দিন প্রমূখ।
