গোয়াইনঘাট

জমি আছে ঘর নেই, নিজ জমিতে গৃহ নির্মাণ প্রকল্পে গোয়াইনঘাটে রয়েছে পর্যাপ্ত সংখ্যক ঘরের চাহিদা

নিজস্ব প্রতিবেদক   ::  প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে আশ্রয়নের অধিকার, শেখ হাসিনার উপহার শ্লোগানে সারা দেশব্যাপী যার জমি আছে ঘর নেই ,তার নিজ জমিতে গৃহ নির্মাণ নামে বিশাল একটি প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের বাস্তবায়নাধীন প্রকল্পের আওতায় সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলায় ৩১৫ টি গৃহের কাজ এ পর্যন্ত পরিপূর্ণ ভাবে শেষ হয়েছে।

জমি আছে ঘর নেই, নিজ জমিতে গৃহ নির্মাণ প্রকল্পে গোয়াইনঘাটে রয়েছে পর্যাপ্ত সংখ্যক ঘরের চাহিদা। উক্ত প্রকল্পের রীতিনীতি ও উদ্দেশ্য অনুযায়ী অন্তর্ভুক্ত হতে পারে নিন্মলিখিত পরিবারটি। যেমন অতি নমসুদ্র বয়স ৪৮বছর পেশায় দিনমজুর। তার পৈতৃক নিবাস সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলায়। তিনি নন্দীরগাওঁ ইউনিয়নের দ্বারিরপার গ্রামের স্থায়ী বাসিন্দা। তার সহায় সম্বল বলতে মাত্র ০.৩ শতাংশ জমি। ওই ০,৩ শতাংশ জমির মধ্যে ছোট একটি খড়ের ঘর। খড়ের ভেড়া ও ঘরের উপরে বিন্না পাতার ছানি। ঘরে প্রবেশ ও বাহিরের সময় সতর্কতা অবলম্বন না করলে মাথায় মারাত্মক আঘাত পাওয়ার আশংকাই বেশি। এই ০৩ শতাংশ জমির মধ্যে ঘরের বাহিরে রয়েছে ছোট্ট একটি আঙ্গিনাও।

৮/৮ ফুটের একটি রুমের পিছনে রয়েছে রান্না বান্নার জন্য একটি চুলা। স্ত্রী, ছোট্ট ছোট্ট ৪টি মেয়ে ৩ জন ছেলেসহ তার পরিবারের সদস্য সংখ্যা ৯ জন। ৮/৮ ফুটের রুমের মধ্যে ৯ সদস্যের পরিবারটি দিনাতিপাত করছেন। পরিবারের কর্তা অতি নমসুদ্র শিশু বয়স থেকেই দিনমজুরের কাজ করে আসছেন। দীর্ঘদিন থেকে শারীরিক ভাবে পরিশ্রম করায় শরীর এখন তেমন ভালো না। মানুষজন আগের মতো তাঁকে আর খোঁজেনা। কাজ পেলে তিনি ৩ শত টাকা মজুরি পান। এই টাকা দিয়ে পরিবারের খাবারের চাহিদাসহ যাবতীয় চাহিদা মেটাতে হয়। আর কাজ না পেলে তাদের অবস্থা অত্যান্ত সূচনীয় হয়। কারণ এই পরিবারটির বসতঘর ছাড়া অন্য কোন অবলম্বন নেই।

বর্ষার মৌসুমে বিভিন্ন স্থান থেকে কেচু উঠিয়ে নিয়ে বন্যার পানিতে ভর্ষির মাধ্যমে স্থানীয় ভাষায় (ডাঁটি, লার ও কুইন) দিয়ে মাছ ধরার কাজ করেন। ভাগ্যক্রমে প্রতিদিন ৩/৫ শত টাকার মাছ বিক্রি করে পরিবারের যাবতীয় চাহিদা মেটানোর চেষ্টা করেন। উল্লেখিত পরিবারের মতো গোয়াইনঘাট উপজেলায় এখনো হাজার হাজার পরিবার বসবাস করছেন। অনুরোপ পরিবার গুলির কর্তারা সর্বদাই সরকারের সাহায্য সহযোগিতা পাবার আশায় স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য, চেয়ারম্যান, উপজেলা চেয়ারম্যানসহ সর্বোচ্চ জনপ্রতিনি জাতীয় সংসদ সদস্যদের মুখাপেক্ষী হয়ে থাকেন। জনপ্রতিনিধিরাও ওইসব পরিবারের পাশে দাড়ানোর জন্য প্রানপণ চেষ্টা চালিয়ে যান। বয়স্ক ভাতা,বিধবা ভাতা,প্রতিবন্ধী ভাতা,মাতৃত্বকালীন ভাতা,ভিজিডি,ভিজিএফ,জিআর চাল,জিআর গম,কাবিখা, কাবিটা ও অতিদরিদ্র পরিবারের জন্য কর্মসংস্থান কর্মসূচিসহসরকারি শতাধিক সহযোগিতা মূলক কার্যক্রমের উপকার ভোগী হিসেবে ওইসব পরিবার গুলিকেই জনপ্রতিনিধিরা অগ্রাধীকার দিয়ে সরকারি সহযোগিতার হাত প্রসারিত করে আসছেন।

গোয়াইনঘাট উপজেলার ৯ টি ইউনিয়ন মিলিয়ে জনসংখ্যা প্রায় ৪ লাখ। তার মধ্যে ২৬৮টি গ্রামে প্রায় ৪৮ হাজার পরিবার বসবাস করছেন। রুস্তুমপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শাহাব উদ্দিন শিহাব জানিয়েছেন তার ইউনিয়নে হতদরিদ্র পরিবার রয়েছে প্রায় ১ হাজার ৯০০টি। পশ্চিম জাফলং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ আব্দুস সালাম তার ইউনিয়নে ২ হাজার ৩০০ টি পরিবার হতদরিদ্র বলে জানান। পূর্ব জাফলং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা লুৎফর রহমান লেবু জানিয়েছেন ৩ হাজার ৫ শতটি পরিবার তার ইউনিয়নে হতদরিদ্র। লেঙ্গুড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাহবুব আহমদ জানিয়েছেন ১ হাজার ৯০০ টি পরিবার হতদরিদ্র। আলীরগাওঁ ইউনিয়ন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আবুল খায়ের ২ হাজার ৫ ০০ টি পরিবার হতদরিদ্র বলে জানান। ফতেহপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আমিনুর রহমান চৌধুরী তার ইউনিয়নে ২ হাজার ১০০ টি পরিবার হতদরিদ্র বলে জানান। নন্দীরগাওঁ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এস কামরুল হাসান আমিরুল তার ইউনিয়নে ২ হাজার ৫০০টি পরিবার হতদরিদ্র বলে জানান। তোয়াকুল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান খালেদ আহমদ তার ইউনিয়নে ২ হাজার ১০০ টি পরিবার হতদরিদ্র বলে জানান।

ডৌবাড়ী ইউনিয়ন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বশির উদ্দিন তার ইউনিয়নে ২ হাজার ৩০০ টি পরিবার হতদরিদ্র বলে জানান। হতদরিদ্র এসব পরিবারের মধ্যে প্রতি মাসে ৩০ কেজি করে
ভিজিডি চাল পায় ১ হাজার ৬ ০০টি পরিবার। প্রতিমাসে ৬০০ টাকা করে মাতৃত্বকালীন ভাতা পায় ১হাজার ১২৩ টি পরিবার। ৬০০ টাকা করে ,বিধবাভাতা ১ হাজার ৯০০টি পরিবার। ৬০০ টাকা করে প্রতি মাসে বয়স্ক ভাতা পান ৬ হাজার ৭২২জন পুরুষ ও করমহিলা।১ হাজার ৬৭৬ জন প্রতিবন্ধী প্রতি মাসে ৫০০ টাকা করে পান। এছাড়াও ৫২ জন দলিত হরিজন প্রতিমাসে ৫০০ টাকা করে পান। ওইসব সুবিধা ভোগীদের বাহিরে এখনো কয়েক হাজার হতদরিদ্র পরিবার রয়েছে। গোয়াইনঘাট উপজেলার পারিপার্শ্বিক
অবস্থা বিবেচনা করে পর্যাপ্ত সংখ্যক ঘর প্রদান করা হউক।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *