রেজওয়ান করিম সাব্বির:: প্রাকৃতিক সম্পদে ভরপুর ছোট ছোট পাহাড়, টিলা, অরণ্য বেষ্টিত সিলেটের স্ব-মহিমায় উদ্ভাসিত সুরমা, কুশিয়ারা, পিয়াইন, সারী নদীর অপরূপ সৌন্দর্য সিলেটকে বাংলাদেশের কাছে আলাদা ভাবে পরিচিত। পরিচিতির অন্যতম অলংকার জৈন্তিয়ার নীল নদ নামে পরিচিত সারী নদী।
সৌন্দর্য্যে ভরপুর সিলেট জেলার জৈন্তাপুর উপজেলার নিজপাট ও চারিকাটা ইউনিয়নে অবস্থিত লালাখাল। সিলেট শহর হতে বাস কিংবা মাইক্রোবাস যোগে উত্তর-পূর্ব অঞ্চল সিলেট-তামাবিল মহাসড়কের সারীঘাট নামক স্থানে আসতে হবে। সেখান থেকে মাত্র ৩০ কিংবা ৪৫ মিনিটে নৌকা যোগে যাত্রা করে পৌছা যায় লালাখাল চা-বাগান ফ্যাক্টরি ঘাটে। মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকার সারী নদীর সচ্ছ পানি। কি সুন্দর নীল, যেন প্রাকৃতি আপন মহিমায় সাজিয়ে রেখেছে সারী নদীর পানিকে। একদম নদীর নিচ দেখা যায়।
ভারতের চেরাপুঞ্জির টিক নিচেই লালাখালের অবস্থান। বাংলাদেশের সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাতের স্থান সিলেটের লালাখাল। ভারতের লুম ও উসিয়াং নদীর মিলনে মাইথ্রু নদীতে উৎপন্ন হয়ে ভারতের চেরাপুঞ্জির উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে বাংলাদেশে লালাখাল দিয়ে সারী নদী নামে প্রবাহিত হয়েছে। লালাখালের অপরূপ স্বচ্ছ জলরাশির নদী ‘সারী বা জৈন্তিয়ার নীলনদ। নদী আর পাহাড়ের মিলিত বন্ধন, সারী নদীর টলমল স্রোতস্বীনি পানি আর পাহাড়গাঁ বেয়ে নেমে আসা ঝর্ণাধারা, যেন প্রকৃতির মায়াবী রূপ সৌন্দর্য্য। কখনো নিজে না দেখলে বুঝানো যাবে না নীল নদের সৌন্দর্য্যরে এ বাহার।
বাংলাদেশের যে কয়েকটি জায়গা রয়েছে নদী আর পাহাড়ের মিলন মেলা তার মধ্যে অন্যতম প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যেরে লীলাভূমি সিলেটের লালাখাল। দু’চোখ ভরে সৌন্দর্য্য দেখতে দেখতে ক্লান্ত হয়ে যাবেন তবুও শেষ হবে না ‘জৈন্তিয়ার নীল নদ’ সারী নদীর সৌন্দর্য্য। নদীর যেখানে শুরু সেখানে রয়েছে দৃষ্টি নন্দিত বিশাল চা-বাগান এর পর ভারতের সীমান্ত।
লালাখাল নদীর অপরূপ সৌন্দর্য্য উপভোগ করতে নৌকা ভ্রমনের বিকল্প নেই। নদীর পানি হচ্ছে নীল রংয়ের, পানি স্থির নয়, সব সময় চলমান। কেননা পাহাড় থেকে সর্বক্ষণ পানি গড়িয়ে আসছে। নদীর পানি নীল কেন বুঝা মুশকিল। পানি ঘোলা হয়ে যে নীল হয়েছে তাও কিন্তু নয়, তারপরেও নদীর পানি নীল। তাই নদীর পানি নিয়ে যে কারো মনে প্রশ্ন জাগা স্বাভাবিক। সারী নদীর পানি নীল বিদায় এলাকার আগত পর্যটকরা বলের জৈন্তিয়ার নীল নদ।
মিশরের নীল নদটি আজও দেখা হয়নি আমার, আর হবে কিনা তাও ভাগ্যের উপর কিন্তু তবে সারী নদী দেখে মনে হয় এযেন জৈন্তিয়ার নীল নদ। সারী নদীর উৎস মূখে তেমন কোন বাড়ীঘর নেই, আছে শুধু হরেক রমমের বনজ সম্পদ সবুজ গাছপালা, চার পার্শ্বে সবুজের হাতছানি। নৌকা যোগে যাওয়ার সময় মাঝে মাঝে কাঁশবনের ঝোপ চোঁখে পড়বে, তবে নদীতে অসংখ্য বাঁকের দেখা মিলবে, প্রতিটি বাঁক দেখার মত সুন্দর। নদী থেকে কিছু দূরে ছোট বড় পাহাড় দেখা যায়। দেখতে যতটা কাছে মনে হবে কিন্তু ততটা কাছে নয়। পাহাড় আর টিলা গুলোকে দেখলে মনে হবে কেউ যেন নিজ হাতে এগুলোকে ফুলদানীতে সাজিয়ে রেখেছে। মাঝে মাঝে নদীর দূ’ধারে ২-১টি ঘাটে একাধিক পল্লীবধূকে দেখা যায়। কাঁধে কলসীতে করে পানি নিয়ে যাচ্ছে আর কেউবা গোসল করতে নদীতে নেমে নীল জলে গা জুড়াচ্ছে যেন গ্রামীণ অবহ বিদ্যমান।
আর নদীতে আসা গায়ের বধুদের দেখলে মনে হয় তারা খুব দুর থেকে এসেছেন। এখানকার বসবাসকারীরা রান্না সহ খাবারের পানি সারী নদী থেকে সংগ্রহ করেন। ভ্রমন বিলাসী পর্যটকদের জন্য স্থানটি একটি আর্কষণীয় স্পট হিসাবে পরিচিতি লাভ করছে। পর্যটকদের কাছে এই স্থানটি পরিচিতির জন্য জাতীয় ভাবে কোন উদ্যোগ গ্রহন করা হয়নি।
অপরদিকে লালাখাল এলাকায় পর্যটকদের থাকার কোন জায়গা নেই। সিলেট শহর থেকে বেশ দূরে, সন্ধ্যার দিকে জৈন্তিয়ার নীল নদে বা সারী নদীতে কোন নৌকা থাকে না। তাই ভ্রমন বা ঘুরাঘুরি সন্ধ্যার মধ্যেই শেষ করতে হয়। সবচেয়ে ভাল নৌকা ভাড়া নিয়ে ঘুরা ঘুরি করতে। লালাখালের চার পার্শ্বে সন্ধ্যার আগমুহুর্তটা আরো অবিস্মরণীয়। উপরে আলোকিত আকাশ, চারপাশে গাছ পালার মাঝে পাখির কিচির মিচির শব্দ, আর সূর্য ডুবির দৃশ্য অপরূপ। নীল পানির ভিতর ডুবে যাচ্ছে লাল থেকে পরে সোনালী হয়ে যাওয়া সূর্য, এমন দৃশ্য যে কাউকে মুগ্ধ করবেই।
আর পাহাড় থেকে নেমে আসা অন্ধকার এক সময় আপনাকে বা পর্যটকদের ঘিরে ফেলে। নৌকায় থাকলে মনে হয় আস্ত নৌকাটাই গিলে ফেলেছে মায়াবী অন্ধকার। উপরে স্বচ্ছ আকাশ চারিদিকে মায়াবী আধাঁর তার সাথে আছে পানির কল কল শব্দ, সন্ধ্যার লালাখাল বেশ ভালো লাগার মতো।