ক্রাইম প্রতিবেদক:: এমসি কলেজ ক্যাম্পাসে বেড়াতে আসা প্রেমিককে মারপিট করে প্রেমিকাকে তুলে নিয়ে উল্লাস করে গণধর্ষণ। আশপাশের এলাকায় ছিনতাই। মাদক সেবন ও ইয়াবা ব্যবসাসহ সকল ধরণের অপকর্ম চালাতো ছাত্রলীগ নামধারী সাইফুর ও তার সহযোগীরা। সে গ্যাং এর মাধ্যমে করতো কু-কর্ম। এসকল অপকর্মের বিষয়ে অধ্যক্ষ, হোস্টেল সুপার সবাই জানতেন।
কিন্তু কেউ ভয়ে মুখ খুলতেন না। ফলে এমসি কলেজ শিক্ষকদের বাংলো দখল করে সেখানে বসবাস ও তরুণীদের ধর্ষণ এবং মাদক সেবন করতো ছাত্রলীগ ক্যাডার সাইফুর, রনি, তারেক, মাহফুজ ও তাদের সহযোগী আশপাশ এলাকার বখাটেরা। আর সন্ধ্যা নামলেই ২০৫ নম্বর কক্ষেই ছুটে আসতো বখাটে ছাত্রলীগ কর্মীরা। মাদক সেবন, নারীর সঙ্গ সবই হতো এই কক্ষে। সবই দেখতেন আশেপাশের শিক্ষার্থীরা। কিন্তু কেউ কোনো প্রতিবাদ করতেন না। এমনকি ফিরেও চাইতেন না এই কক্ষের দিকে। ওখানে যা হতো সব যেনো বৈধ।নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক শিক্ষার্থী জানান, সিলেট এমসি কলেজের মনোরম প্রাকৃতিক পরিবেশে ঘুরতে আসাদেরকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে টাকা, স্বর্ণ ছিনতাই। প্রেমিক যুগলকে আটক করে মারপিট ও তাদের টাকা ছিনতাই এবং প্রেমিককে ভয় দেখিয়ে প্রেমিকাকে ছাত্রাবাসে তুলে নিয়ে গণধর্ষণ সবই করতো সাইফুর-রনি গ্যাং। তাদের এসকল অপকর্মের বিষয় কেউ কথা বলতো না প্রাণ ভয়ে। এমনকি প্রেমিকের সাথে ঘুরতে এসে গণধর্ষনের শিকার ওই সকল প্রেমিকারাও লোকলজ্জার ভয়ে কোথাও মুখ খুলতেন না।
এমসি কলেজ শিক্ষার্থীরা জানান, কিছুদিন পূর্বে এমসি কলেজে অধ্যয়নরত দুইজন ছাত্রী তাদের উপর অমানবিক নির্যাতনের বিচার চেয়েছিলেন শিক্ষক ও কলেজের সিনিয়রদের কাছে। কিন্তু এমসি কলেজ ছাত্রলীগ নিয়ন্ত্রণকারী জেলা আওয়ামীলীগের এক নেতা ও তার দুই সহযোগি জেলা ছাত্রলীগের সাবেক নেতা বিষয়টি মীমাংসা না করে উল্টো বিচার প্রার্থীদের হুমকী দিয়ে দমিয়ে রাখেন। এমন অনেক ঘটনা এভাবে ধামাচাপা দেয়া হয়েছে বলেও জানান শিক্ষার্থীরা।এদিকে, কলেজের ছাত্রাবাস পুড়িয়ে দেয়ার পর নবনির্মিত হলের বাইরে এখনো বিদ্যুতায়ন হয়নি। সন্ধ্যা নামলেই অন্ধকার হয়ে পড়ে এলাকা। হলের নিচ তলা থেকে দু’তলায় উঠলেই বাম পাশে পড়ে আলোচিত ২০৫ নম্বর কক্ষ। এই কক্ষেই বাস ছাত্রলীগের ‘ভয়ঙ্কর’ কর্মী শাহ মাহবুবুর রহমান রনির। তার নামেই এই হলটি বরাদ্দ। গত বছর সে এমসি কলেজ থেকে মাস্টার্স পাস করলেও হলের ওই রুম ছাড়েনি। এখনো রুমটি তার নামেই বরাদ্দ।
জোরপূর্বক কক্ষটি দখল করে অপরাধ আস্তানায় পরিণত করেছে সে। তার ভয়ে তটস্থ থাকেন হলের অন্য ছাত্ররা। বছর দু’এক আগে ওই কক্ষে এক ছাত্রকে নিয়ে টর্চার করা হয়েছিলো। এরপর থেকে রনির কক্ষটি সাধারণ শিক্ষার্থীদের কাছে আতঙ্কের নাম ছিল। ওই কক্ষে বসেই ইয়াবা সহ নানা মাদক সেবন করতো। আড্ডা দিতো, চিৎকার করতো। যখন যা ইচ্ছা তখন তাই করেছে। সন্ধ্যার পর মাঝে মধ্যে তারা হলের বাইরে খোলা জায়গায় অবস্থান নিতো। অন্ধকারময় ফাঁকা স্থান। ওখানে বসে তারা মাদক সেবন করতো। পাশেই বালুচর, টিলাগড়। ওখান থেকে ছাত্রলীগের বখাটে কর্মীরা যেতো। তাদের নিয়েও আড্ডা হতো। মূলত রনির অবস্থানের কারণেই বাইরের ছাত্রলীগ কর্মীরা বাধা ছাড়াই হলে প্রবেশ করতো। দারোয়ানরাও থাকতো তাদের ভয়ে তটস্থ। শুক্রবার হলের সামনে ছাত্রী ধর্ষণের ঘটনার সময় দারোয়ানরা সব দেখলেও প্রতিবাদ করেনি। বরং তারা ঘটনাটি দেখেও দেখেনি বলে জানায়।
গত শুক্রবার গৃহবধূকে ধর্ষণের ঘটনার পরপরই হলে ছুটে যান কয়েকজন সাবেক ছাত্রলীগ নেতা। তারা জানিয়েছেন, হলের সামনে পুরোটাই অন্ধকার। এ ছাড়া ওখানে বখাটেরা আড্ডা দেয়। তারা প্রায়ই সন্ধ্যায় হলের বাইরে ছিনতাই করে। পাশের টিলায় বেড়াতে আসা নারীদের উত্ত্যক্ত করে। কখনো কখনো ধর্ষণ করেছে। কিন্তু ভয়ে কেউ মুখ খুলেন না। ছাত্রাবাসে বসবাসরত কয়েকজন ছাত্র জানিয়েছেন, শিক্ষক বাংলোতে রাজার হালে বসবাস করতো সাইফুর। রাত হলেই বাংলোতেও সে অপকর্ম করতো। প্রায় সময় অচেনা নারীরাও তার বাংলোতে আসতো। আর তরুণীদেরকেও জোর করে উঠিয়ে নিয়ে মারপিট করে ওই গণধর্ষণ চালাতো ছাত্রলীগ ক্যাডার সাইফুর, রনি, তারেক, অর্জুন, মাহফুজ ও তাদের গ্যাং এর সদস্যরা।এমসি কলেজ শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন, এমসি কলেজের অভ্যন্তরে মাদক, জুয়ার আড্ডা বসিয়েছিলো সাইফুর ও রনির নেতৃত্বে ক্যাডাররা। এসবের প্রতিবাদ করার কারণে ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের উপরই তারা সশস্ত্র অবস্থায় একাধিক বার হামলা চালায়। পুলিশ শিক্ষক বাংলো থেকে সাইফুরের নিয়ন্ত্রণে থাকা একটি আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করে। ওই আগ্নেয়াস্ত্র সাইফুর এমসি কলেজে সংঘর্ষে ব্যবহার করেছে। এ ছাড়া টিলাগড়, বালুচর, নতুন বাজার, কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা নিয়ন্ত্রণ করতো। ওই সব এলাকায় বেড়াতে যাওয়া লোকজনের সর্বস্ব ছিনতাই করতো তারা। এমসি কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর সালেহ উদ্দিন আহমদও স্বীকার করেছেন তার অসহায়ত্বের কথা।