গোয়াইনঘাট

বিকল্প কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা না থাকায় মানবেতর জীবন…এম.এ মতিন    

নিজস্ব প্রতিবেদক   ::  কৃষি ও বার্কি শ্রমিকের কাজ ছাড়া আর কোনো বিকল্প কাজের সুযোগ নেই সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার সিংহভাগ মানুষের । ফলে এখানকার জনগোষ্ঠীর বড় একটি অংশ বাড়িতে বসে বছরের ৫/৬ মাস অলস সময় কাটান। তাদের কর্মহীনতা আরোও বেশী বৃদ্ধি পায় বর্ষা মৌসুমে। কারণ উপজেলার সিংহভাগ অঞ্চল বছরের ৫ থেকে ৬ মাসই পানিতে নিমজ্জিত থাকে। এ সময় এলাকার কিছু লোক বন্যার পানিতে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করে থাকে। আর পানি সরে যাওয়ার পর শুরু হয় কৃষিকাজ,চারা উৎপাদন,চারা রোপন,ধান কাটা, মাড়াই, সংগ্রহ ও প্রক্রিয়াজাত করণ। ধান সম্পূর্ণভাবে বাড়িতে নিতে না নিতেই শুরু হয় মোশল ধারে বৃষ্টি। একদিকে স্থানীয় বৃষ্টি অপর দিকে উজান থেকে নেমে আসে পাহাড়ি ঢল। দু’য়ে মিলে পানিতে নিমজ্জিত হয় উপজেলার অধিকাংশ অঞ্চল। উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও স্থানীয় বৃষ্টিতে গোয়াইনঘাট উপজেলার সিংহভাগ এলাকা পরিনত সাগরে। আর তখন উপজেলার কোথাও কোনো কাজ পাওয়া যায়না। যার কারণে উপজেলার বিশাল জনগোষ্ঠীর বড় একটি অংশই স্থানীয়ভাবে কোনো কাজ না থাকায় বাড়িতে বসে অলস সময় পার করে।

ফলে দারিদ্র্যের দুষ্টচক্র আঁকড়ে ধরে রাখে তখন তাদের দূংখ ও দূর্দশার সীমা থাকেনা। দারিদ্রতার ফাঁদ থেকে বের হতে পারে না গোয়াইনঘাট উপজেলার অধিকাংশ মানুষেরা।
এ ছাড়া বর্ষাকালে বাড়ির চারপাশে পানি থাকায় বাড়িগুলোর আয়তন ছোট হয়ে যায় এবং শাকসবজি চাষের জায়গাও থাকে না বাড়িগুলোতে। কৃষি কাজে ব্যবহৃত গবাদি পশুগুলোকে বসত ঘরের পাশে ছোট্ট টিন শেড বা খড়েরে ঘরে আড় তৈরি করে বেঁধে রাখা হয়। ঘরে থাকা খড় খাওয়ানো হয় গবাদি পশুগুলোকে। গোয়াইনঘাট

উপজেলার তোয়াকুল ইউনিয়নের ঘোড়ামারা গ্রামের ষাট ঊর্ধ্ব কৃষক হেকিম আলী বলেন, কৃষি কাজ শেষেন নিজ এলাকায় কাজের সুযোগ থাকলে এলাকার মানুষ কখনও গরিব থাকত না। বর্ষাকালে বেকার লোক বেশি থাকায় মজুরি ও কাজ কম থাকে। তাই বৈশাখে গোলায় তোলা ধান বিক্রি করে সংসার চালাতে হয়। এজন্য তাদের আয় বলতে কিছুই থাকে না। গোয়াইনঘাট উপজেলার লেঙ্গুড়া ইউনিয়নের সিটিংবাড়ী গ্রামের কৃষক মন্তাজ আলী জানান, প্রায় ৬ একর জমিতে বোরো আবাদ করে এ বছর তিনি ৩০মণ ধান পেয়েছেন। এ থেকে সংসারের খরচ, আগামী বছরের কৃষিকাজের খরচ, কৃষিশ্রমিকের মজুরি, সন্তানদের লেখাপড়ার খরচসহ যাবতীয় খরচ মেটাতে হবে ।

তাই ৪/৫ মাসের মধ্যেই তাঁর এ ভান্ডার খালি হয়ে যাবে। উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও আলীরগাওঁ ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক একাধিক বারের চেয়ারম্যান মোঃ গোলাম কিবরিয়া হেলাল বলেন, উপজেলার সিংহভাগ মানুষ সম্পূর্ণ কৃষির ওপর নির্ভরশীল। কিন্তু এখানে সারাবছর কৃষি কাজের সুযোগ নেই। মানুষ বছরে মাত্র একবার ধান উৎপাদন করে আর সারা বছর সেই ফসলের ওপর নির্ভর করে চলে। তাই বৈশাখ থেকে আশ্বিন মাস পর্যন্ত উপজেলা বাসী তেমন অভাবে থাকে না। কিন্তু কার্তিকের শুরু থেকে নতুন ফসল ওঠার আগ পর্যন্ত তাদের কষ্ট হয়।
তিনি বলেন, যুবসমাজকে কাজে লাগাতে হলে কারিগরি প্রশিক্ষণ দিয়ে দক্ষ করে তুলতে হবে এবং পাশাপাশি উপজেলায় বিকল্প কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে হবে।

গোয়াইনঘাট উপজেলা সদরের বাসিন্দা ও গোয়াইনঘাট প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি মো আব্দুল মালিক বলেন গোয়াইনঘাট উপজেলায় এখনো দক্ষ জনশক্তি গড়ে উঠছে না। ছেলেমেয়েরা প্রচলিত শিক্ষাব্যবস্থা থেকে জীবনমুখী কার্যকর কোন শিক্ষা পাচ্ছে না। তাই শিক্ষিত হলেও কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হচ্ছে না। কর্মমুখী শিক্ষার অভাবে তারা দেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে অবদান রাখতে পারছে না। এমনকি পরিবারের আয় উন্নতিতে তাদের কোনো ভূমিকা নেই। তাই গোয়াইনঘাট উপজেলায় কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান স্থাপন করে বেকার যুবসমাজকে দক্ষ করে গড়ে তুলতে হবে। তাহলে স্থায়ীভাবে দারিদ্র্য বিমোচনের সুযোগ সৃষ্টি হবে।এ বিষয়ে গোয়াইনঘাট প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি মোঃ মনজুর আহমদ বলেন, গোয়াইনঘাট উপজেলার সিংহভাগ মানুষকে জরুরি ভিত্তিতে অতিমাত্রায় কৃষি নির্ভরতা থেকে সরিয়ে আনতে হবে। কারণ একমাত্র কৃষির ওপর নির্ভশীল হওয়ায় দারিদ্রতা গোয়াইনঘাট উপজেলাবাসীর পিছু টানছে । সুতরাং আধুনিক কৃষির পাশাপাশি বিকল্প কর্মসংস্থানের কর্মক্ষেত্র সৃষ্টিতে
সরকারের পাশাপাশি ধনাঢ্য ব্যক্তিদের এগিয়ে আসতে হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *