গোয়াইনঘাট প্রচ্ছদ

ভোরের অনুভূতি আমাদের অদৃশ্য অন্য একটি হাতের নাম অজুহাত

ডেইলি গোয়াইনঘাট ডেস্ক :: করোনার জন্য আমরা শুধু বাহিরের লোকগুলোকে ঘরে ফিরতে বলছি। অন্যদিকে ঘরের লোকগুলো যে ভোর  ৬টা পর্যন্ত মোবাইল নামের যন্ত্রনার কবলে পড়ে নি:শেষ হয়ে যাচ্ছে তাদের কি হবে? বাচ্চাগুলো ঘুমুচ্ছে শেষ রাতে, মা ঘুমাচ্ছে ভোর রাতে,বাবা ঘুমাচ্ছে সাজ সকালে তাহলে রাত হবে কখন? বাচ্ছাদের সঠিক সময়ে সুষম খাবার বন্টন করবে কোন বাবা মা? করোনা প্রতিরোধে নিজের ও পরিবারের শারিরীকও মানসিক শক্তির যোগানদাতা হবে কে? সময়ানুবর্তীতা সম্পর্কে নতুন প্রজন্মকে জ্ঞান যোগাবে কোন অভিবাবক? ভোরের পাখির কলতান, শীতের শিশির ভেজা ঘাস নিয়ে গদ্য রচনা করবে কোন প্রজাতি? পৃথিবীটা সত্যিই কেমন যেন অস্থির হয়ে যাচ্ছে। সবকিছু নিমিষেই যেন তলিয়ে যাচ্ছে। সময়কে পার করতে গিয়ে আমরা যেন প্রতিটি মুহুর্তটাকে গলা টিপে হত্যা করছি। করোনার দাবানলে সরাসরি যে পুড়ছে না, সেও পরোক্ষভাবে তার তাপদাহে জ্বলেপুড়ে অঙ্গার হয়ে যাচ্ছে। তার মানে করোনায় আক্রান্ত হচ্ছে প্রতি মুহুর্তে বিশ্বের কোটি কোটি মানুষ। করোনার একটি ভাইরাস সরাসরি মানবদেহে প্রবেশ করে মানুষের ফুসফুসকে নিস্তেজ করে দিচ্ছে আবার অন্য ভাইরাস জীবন্ত মানুষগুলোর মস্তিষ্কের সকল সচল সেলগুলোকে তিলে তিলে শেষ করে যাচ্ছে ।

আচ্ছা একটি পরিবারের প্রতিদিনের দৈনন্দিন কাজগুলোকে যদি আমরা একটু আদর্শিক পরিবারের লাইফ স্টাইল অনুযায়ী ভাগ করি তাহলে কতোটুকু সময়একটি পরিবারের অলস হিসেবে হাতে থাকে, তা দেখে নেয়া যায় ( করোনায় কাজের ভুয়াবিহীন একটি মুসলিম পরিবার)

কাল্পনিক সময় বন্টন:
ফজরের নামাজ সোয়া ৫টা হালকা নাস্তা সেরে পুনরায় একটু বিশ্রাম। সকাল ৬টায় বাচ্চাদের ঘুম থেকে তুলে হাতমুখ ধৌত করে পড়াতে বসানো। নাস্তা প্রস্তুত করতে ৭/৮ টা। ঘর দোয়ার পরিস্কার, দরজা জানালা খোলে বাসার আঙ্গিনা পরিস্কার করতে ৯/৯:৩০ টা। ওয়াশরুম, ফ্লোর বাসাবাড়ির জমানো কাপড় চোপড় ইত্যাদি ধৌত করতে ১১/১২ টা। বাচ্ছাদের ফলমূল, ঔষধ সেবন আত্মীয় -স্বজনের খোঁজখবর নিতে দুপুর ১টা। দুপুরের খাবার প্রস্তুত, গোছল,নামাজ, দুপুরের খাবার( বাচ্চাদের সহ) ইত্যাদি বিকেল ৩: ৩০ টা। বাচ্চাদের সাথে একটু খেলাধুলা, একটু টিভি সংবাদ তারপর বিশ্রাম/ ঘুম সাড়ে ৪ঘন্টা। আছরের নামাজ, বিকেলের নাস্তা ৫:৩০ ঘ:। মাগরিবের নামাজ, বাচ্ছাদের পড়াশুনা, রাতের খাবার প্রস্তুত ৮ঘটিকা। রাতের খাবার ৯-১০ ঘ:। এশার নামাজ, পরিবার নিয়ে গল্পগুজব, টিভি, আত্মীয়স্বজনের সাথে ফোনালাপ ১১ঘটিকা পর্যন্ত। বাচ্চাদের ঘুম পাড়ানো, নিজেও ঘুমুতে যাওয়া, ধার্মিক অথবা যে কোন বই নিয়ে পড়াশুনা ইত্যাদি করতে ঘুমের জন্য প্রস্তুতি নিতে ১২– ১২:৩০ঘ:। রাত ১২:৩০- থেকে পরবর্তী ৬/৭ ঘন্টা ঘুমানো যদি একজন সুস্থ মানুষের প্রয়োজন হয় তাহলে সেই সময় তো খোজে পাওয়া যাচ্ছে না। একটি পরিবারে বিরক্তিকর সময়টুকু হাতে কখন থাকে তার কোন উত্তর নেই। সবার যেন একটিই কমন কথা ঘরে বসে সময় যাচ্ছে না। তাই দিনকে রাত আর রাতকে দিন করে বাচ্চা কাচ্চাসহ মোবাইলের উপর হুমড়ী খেয়ে পড়ে যেতে হবে।অন্য কোন প্রাত্যহিক কাজ করা যাবে না।নতুবা ঘর থেকে বেরিয়ে পড়তে হবে।

“করোনা ” হয়তো মানুষের কাছ থেকে বিদায় নেবার সময় জানতে চাইবে। করোনা বলবে আমি তো তোমাদের মতো সুস্থ মানুষদেরকে আক্রমন করিনি তাহলে তোমাদের মস্তিস্কের কোষগুলোকে কোন ভাইরাসে নিস্তেজ করে দিলো?? তাই আজকের পৃথিবীর এই করুন পরিস্থিতির জন্য “করোনা” নাকি আমরা দায়ী সেই প্রশ্নের জবাব হয়তো দিতে না পারলেও অজুহাত দেখাতে পারবো। যেহেতু আমাদের দুটি হাতের পরও অদৃশ্য একটি হাত রয়েছে আর সেটি হচ্ছে অজুহাত।

যদিও দীর্ঘ সময় ঘরে থাকা ভীষন কষ্টের, তবুও একটি কষ্টকে কোন অনিষ্ট দিয়ে পুষিয়ে নেয়াটা হবে আরও ভয়ানক। একটিকে জয় করতে হলে কিছু কষ্টকে মেনে নিতে হবে।নতুন প্রজন্মকে যে কোন মূল্যে আমাদের সুস্থ রাখাটা হবে প্রধান কাজ।

>>লেখক, আব্দুল আহাদ >>অফিসার ইনচার্জ গোয়াইনঘাট থানা সিলেট<<

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *