ডেইলি গোয়াইনঘাট ডেস্ক :: গোয়াইনঘাটে ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ সেবার পরিধি বাস্তবায়িত হলো। শতভাগ বিদ্যুৎতায়িত এলাকা হওয়ার তালিকায় অর্ন্তভূক্ত হলো সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলা। ডিসেম্বর ২০১৯’র মধ্যে ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ সরবরাহ্ সরকারের নির্দেশনা অত্যান্ত সফলতার সহিত বাস্তবায়ন করেছে সিলেট পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-২।
শতভাগ বিদ্যুৎ পরিসেবা সংযোগসহ গ্রাহকের দোরগোড়ায় পৌছে দিতে তাদের সকল কার্যক্রম ইতিপূর্বে শেষ হয়েছে। সীমান্ত জনপদ সিলেটের গোয়াইনঘাটে প্রায় ৫শত বর্গ কিলোমিটার এলাকার ৬৮টি গ্রাম জুড়ে এখন প্রতিটি বাড়ী এবং ঘরে ঘরে জলছে বৈদ্যুতিক আলো। আনন্দময় পরিবেশ লক্ষ করা যাচ্ছে নতুন বিদ্যুৎপ্রাপ্ত গ্রাহকদের ঘরে ঘরে। শতভাগ বিদ্যুৎ সরবরাহ্ শেষ হওয়ায় গোয়াইনঘাটও প্রধানমন্ত্রীর মাধ্যমে উদ্বোধনের অপেক্ষায় রয়েছে।
সিলেট পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-২ সূত্রে জানা যায়, বিগত এক বছরে নতুন লাইন নির্মান হয়েছে ১ শত ১০ কিঃমিঃ, গ্রাহক বৃদ্ধি হয়েছে ৬ হাজার,লাইন নির্মাণসহ এই খাতে ব্যায় হয়েছে ১ কোটি ৬৪ লক্ষ ২৯ হাজার ৫০ টাকা। সিলেটের গোয়াইনঘাটে সরকারের প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমদ এমপির প্রচেষ্টায় উপজেলা সদর থেকে শুরু করে প্রত্যন্ত অঞ্চল এমনকি হাওর এলাকায়ও দ্রুত বিদ্যুৎতায়ন কার্যক্রম অত্যান্ত গতিশীলতায় সম্পন্ন হয়। ২০০৯সাল থেকে পর্যায়ক্রমে ধারাবাহিকভাবে বিদ্যুৎ পরিসেবা জনগণের দোরগোড়ায় নিয়ে আসতে সরকারে সিদ্ধান্ত গোয়াইনঘাটে অবশেষে বাস্তবায়িত হচ্ছে।
শতভাগ বিদ্যুৎতায়নে গোয়াইনঘাটকে দ্রুত অর্ন্তভূক্তি করণে সিলেট পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি -২ এর জিএম মোঃ আবু হানিফ মিয়ার সহযোগিতায় এবং গোয়াইনঘাট এ্যারিয়া অফিসের ইনচার্জ মোঃ ছিদ্দিকুর রহমানসহ বিদ্যুৎ কর্মকর্তা কর্মচারীদের ভূমিকা ছিলো চোখে পড়ার মতো। তারা গ্রাহক সেবায় নিবেদিত প্রাণ কর্মী হয়ে কাজ করায় উপজেলা সদর থেকে শুরু করে হাওরাঞ্চলসহ সমগ্র গোয়াইনঘাটের গ্রাহকদের পাশে থেকে তারা বিদ্যুৎ সেবায় কাজ করেছেন।
প্রতিকূল আবহাওয়া, বন্যা, পাহাড়ী ঢলসহ যে কোন দূর্যোগে বিদ্যুৎ সরবরাহ্ বিচ্ছিন্ন হওয়ার মাত্র কয়েক ঘন্টা সময়ের ভিতরে তা মেরামতসহ পুনরায় সরবরাহ্ চালু করে গ্রাহক সেবা বৃদ্ধির কারণে গোয়াইনঘাট জুড়ে আলোচিত নাম সিদ্দিকুর রহমান। ইতিপূর্বে গোয়াইনঘাট বাজার,বিছনাকান্দি বিজিবি ক্যাম্প,কান্দুবস্থিসহ বিভিন্ন স্থানে ঝড়ের কারণে ছিড়ে যাওয়া লাইন বিকল ট্রান্সফরমার কয়েক ঘন্টার মধ্যেই সচল করে দিয়ে দূর্যোগপূর্ন পরিবেশেও বিদ্যুৎ সরবরাহ অক্ষুন্ন রাখতে পেরে গ্রাহকমনে স্থান করে নিয়েছেন তিনি।কোথাও বিদ্যুৎ বিভ্রাটের সংবাদ পেলে তিনি তাৎক্ষনিক লোকবল নিয়ে নিজেই চলে যান ঘঠনাস্থলে, রক্ষা হয় জান মালের। গোয়াইনঘাটে লোড শেড়িং যন্ত্রনা একেবারে কমিয়ে আনা হয়েছে। সিলেট পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-২ (পবিস) এর অর্ন্তভূক্ত এলাকায় গ্রাহকদের হয়রানিও কমেছে বহুগুণ। বিত্তবান থেকে শুরু করে ভিক্ষুক সবার ঘরে ঘরে এখন বিদ্যুৎতের আলো জ্বলে। সরেজমিনে এমন চিত্র ফুটে উঠেছে।সরেজমিন জানা যায়, উপজেলার সতী গ্রামের কুলছুমা বেগম। টাকার অভাবে বিদ্যুৎ সংযোগ নিতে পারছিলেন না।
এমতাবস্থায় বিষয়টি কানে আসে গোয়াইনঘাটের এ্যারিয়া অফিস ইনচার্জ ছিদ্দিকুর রহমানের। তার অর্থায়নে ৫মে ২০১৯ বিকেল ৫টায় সতি গ্রামের কুলছুমার ঘরে মিটার বসিয়ে এনার্জি বাল্ব লাগিয়ে বিদ্যুৎতায়ন করে দেন সিদ্দিকুর রহমান। বিদ্যুৎতের আলোয় তার ঘর আলোকিত হয়ে উঠলে তার মেয়ে নাদিয়াÑ সাদিয়া, জুবেদার মুখে ফুটে উঠে আনন্দের হাসি। মা কুলছুমা সন্তানদের খুশি দেখে আনন্দ অশ্রুতে ভরে উঠে তার দুচোখ। তিনি বিদ্যুৎ বিভাগের এমন মহানুভবতায় কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। কুলছুমার মতো অগণিত পরিবার রয়েছে মাত্র ৫শত ৬৫টাকার মিটার ফি দিয়ে বিদ্যুৎতের আলো পেয়েছেন।
একান্ত আলাপ চারিতায় গোয়াইনঘাটের এ্যারিয়া অফিস ইনচার্জ সিদ্দিকুর রহমান জানান,সেবার মানসিকতা নিয়ে সিলেট পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-২ নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ্সহ ঘরে ঘরে বিদ্যুৎতায়ন কার্যক্রম সম্পন্ন হয়েছে। তিনি গোয়াইনঘাটে বিদ্যুৎ পরিসেবায় ২০১৭ সালে ৫ কোটি টাকা ব্যায়ে নির্মিত ১০এমবি বিদ্যুৎ উপকেন্দ্রের আওতাভূক্ত গ্রাহক সেবা বাড়াতে কার্যত আরও উদ্যোগের প্রয়োজন আছে বলে অভিমত ব্যক্ত করেন।
জিএম আবু হানিফ মিয়া জানান,সিলেট পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-২ এর আওতাধীন গোয়াইনঘাট উপজেলার সর্বত্র ঘরে ঘরে বিদ্যুৎতায়িত হয়েছে। লোড শেডিংসহ সব ধরনের সমস্যা দূরীকরণ হয়েছে। শতভাগ বিদ্যুৎতায়ন এলাকা হিসাবে এখন উদ্বোধনের অপেক্ষায়। সরকারের প্রধানমন্ত্রী দেশের অন্যান্য এলাকার শতভাগ বিদ্যুৎতায়ন কার্যক্রমের উদ্বোধনের সময় গোয়াইনঘাটের শতভাগ বিদ্যুৎতায়ন কার্যক্রমেরও উদ্বোধন করবেন।