ডেইলি গোয়াইনঘাট ডেস্ক :: গোয়াইনঘাট উপজেলায় অবৈধভাবে পাথর উত্তোলন বন্ধে হার্ডলাইনে রয়েছে উপজেলা প্রশাসন। সিলেটের জেলা প্রশাসক এম.কাজী এমদাদুল ইসলামের নির্দেশনায় নবাগত উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ নাজমুস সাকিব গোয়াইনঘাটে যোগদানের পর পরই উপজেলার দুটি পাথর কেয়ারী থেকে পাথর উত্তোলন বন্ধে হার্ডলাইনে রয়েছেন। ইতিমধ্যে দুটি কোয়ারীতে একাধিক বার টাস্কফোর্সের অভিযানও পরিচালনা করেছেন তিনি ।
যার ফলে গোয়াইনঘাট উপজেলার জাফলং ও বিছনাকান্দি পাথর কোয়ারিতে পাথর, বালু উত্তোলনসহ সব ধরনের কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। সরকার ঘোষিত ইসিএ এলাকা এবং উচ্চ আদালতে বিচারাধীন মামলার কারণে গোয়াইনঘাটের ব্যস্ততম এই ২টি পাথর কোয়ারি থেকে বালু, পাথর উত্তোলন, সরবরাহ ও পরিবহনসহ সব ধরনের কোয়ারি কেন্দ্রিক কর্মতৎপরতা বন্ধ থাকায় এ খাতে জড়িত শ্রমিক ও ব্যবসায়ীদের মধ্যে চরম অমানবিক পরিস্থিতির শিকার হচ্ছেন। ২টি কোয়ারিতে প্রশাসনিক অভিযান অব্যাহত এবং নজরদারি থাকার কারণে চলতি মৌসুমে পাথর উত্তোলন এবং সরবরাহ কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। জাফলং ও বিছনাকান্দি পাথর কোয়ারি ঘুরে দেখা যায়, কোয়ারি অভ্যন্তরে সনাতন পদ্ধতির পাথর, বালু উত্তোলন প্রক্রিয়া বন্ধ হয়ে গেছে। স্থানীয় এবং বহিরাগত লক্ষাধিকের বেশি শ্রমিক এই ২টি পাথর কোয়ারিতে শুকনো মৌসুমে পাথর, বালু উত্তোলন ও সরবরাহ কাজে জড়িত থেকে তাদের জীবিকা নির্বাহ করে থাকেন।
জাফলং বস্তি এলাকার রহমত আলী জানান, আমরা খেটে খাওয়া মানুষ আইন, প্রশাসন বুঝি না। কোয়ারি খুলে দেন, কাজ না করলে পোলাপান, বউ-বাচ্চাদের কী খাওয়াবো। বিছনাকান্দি পাথর কেয়ারী সংলগ্ন বগাইয়া হাওর গ্রামের বার্কি শ্রমিক কুতুবউদ্দিন জানান, এতদিন সনাতন পদ্ধতি কার্যক্রম চালিয়ে তিনি বারকি নৌকায় বালু আহরণ করে জীবন-জীবিকা চালিয়ে আসছিলেন। পাথর, বালু উত্তোলনকারী শ্রমিক হিসেবে ৮ জনের সংসার চালান তিনি। জানান, বিছনাকান্দি পাথর কোয়ারিতে কাজ করেই তার সংসার চলতো। কিন্তু হঠাৎ করে পাথর, বালু উত্তোলন বন্ধ হওয়ায় তাদের কর্মসংস্থান বন্ধ হয়ে গেছে। তিনি বিষয়টি মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে দেখে শ্রমিকদের জীবন-জীবিকা রক্ষায় পাশে দাঁড়াতে বিচার বিভাগ, প্রশাসন এবং সরকারের সদয় দৃষ্টি আর্কষণ করেন। তার মতো এমন দাবি জানান, আরো একাধিক শ্রমিকরা।
এদিকে শ্রমিকের পাশাপাশি এ খাতে জড়িত কয়েক শতাধিক ব্যবসায়ী পাথর, বালু উত্তোলন কার্যক্রম বন্ধ থাকায় চরম বিপাকে পড়েছেন। কোয়ারি ২টির উত্তোলিত পাথর বিভিন্ন স্থানে বিক্রি করে তারা তাদের ব্যবসায়িক কার্যক্রম চালিয়ে আসছিলেন। চলতি বছরের অক্টোবর থেকে শুরু হয়ে বর্তমানে কোয়ারির কার্যক্রম স্বাভাবিক ও নির্বিঘ্ন না হওয়াতে পাথর উত্তোলন প্রক্রিয়া বন্ধ থাকায় তারা ব্যবসায়িকভাবে মারাত্মক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন। বিশেষ করে সরকারি-বেসরকারি এবং এনজিও সংস্থাগুলো থেকে ঋণ নিয়ে ব্যবসা পরিচালনাকারী ব্যবসায়ীরা যেন দু’চোখে অন্ধকার দেখছেন।
জাফলং পাথর কোয়ারির ব্যবসায়ী মো. আব্দুল্লাহ, সাহেব আলী, ইমান আলী, আবদুল আউয়াল, একাব্বর আলী, মনিরুজ্জামান, আলমাছ উদ্দিন, আছাব উদ্দিনসহ একাধিক ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী জানান, জাফলং পাথর কোয়ারিতে পাথর, বালু উত্তোলন প্রক্রিয়া বন্ধ থাকায় তারা চরমভাবে অর্থনৈতিক সংকটে পড়েছেন। বিশেষ করে দৈনন্দিন খরচের পাশাপাশি ব্যাংক ও এনজিও সাপ্তাহিক এবং মাসিক কিস্তির টাকা যোগাতে তারা হিমশিম খাচ্ছেন। সরকার ঘোষিত ইসিএ এলাকা হওয়াতে জাফলং পাথর কোয়ারির ইসিএ এলাকার বাইরেও পাথর উত্তোলন করা সম্ভব হচ্ছে না। উচ্চ আদালতে মামলা থাকার কারণে প্রশাসনিক নিষেধাজ্ঞা এবং অভিযান অব্যাহত থাকায় কোয়ারি অপারেশন সম্পূর্ণরূপে বন্ধ রয়েছে।
এমতাবস্থায় পরিবার পরিজন নিয়ে তারা মানবেতর জীবনযাপনের মুখোমুখি রয়েছে। মানবিক বিবেচনায় অত্রাঞ্চলে মানুষজনের বিকল্প কর্মসংস্থান সৃষ্টি হওয়ার আগ পর্যন্ত জাফলং ও বিছনাকান্দি পাথর কোয়ারিতে স্বাভাবিকভাবে পাথর উত্তোলন ও সরবরাহ কাজ অব্যাহত রাখার জন্য উচ্চ আদালত ও সরকারের নিয়োজিত প্রশাসনের প্রতি অনুরোধ করেছেন ব্যবসায়ীরা। বিছনাকান্দি পাথর ব্যাবসায়ী সমিতির সভাপতি হাজী মাসুক আহমদ বলেন, গোয়াইনঘাটের জাফলং এবং বিছনাকান্দি পাথর কোয়ারি ২টিতে প্রতি বছর সৃজন সময়ে স্থানীয় এবং বহিরাগত লক্ষাধিকেরও বেশি পাথর, বালু উত্তোলনে শ্রমিকের কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করে আসছে। হঠাৎ করে কেনো রকম বিকল্প কর্মসংস্থান না করে আমাদের শ্রমিকদের রুটি-রুজির পথ বন্ধ করে দেয়ায় স্থানীয় এবং বহিরাগত লক্ষাধিকের বেশি শ্রমিক কার্যত বেকার হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন।
গোয়াইনঘাটের রুস্তমপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. আশিকুর রহমান জানান, বিছনাকান্দি কোয়ারিতে সনাতন পদ্ধতিতে পাথর উত্তোলনে আইনি কোন বাধা না থাকলে প্রশাসন তরফ থেকে মৌখিকভাবে পাথর উত্তোলন বন্ধ রাখা হয়েছে। এখানকার কর্মরত হাজার হাজার শ্রমিক ব্যবসায়ীদের বিকল্প কর্মসংস্থান না হওয়ার আগ পর্যন্ত কোয়ারি অঞ্চলে পাথর, বালু উত্তোলনে কঠোরতা দেখালে এলাকায় চুরি, ডাকাতি, ছিনতাইসহ আইনশৃঙ্খলা অবনতির চরম আশংকা বিদ্যমান। দ্রুত এ ব্যাপারে ব্যবস্থা না নিলে ক্ষতিগ্রস্ত হবে শ্রমিক ব্যবসায়ীসহ এলাকাবাসী।
উভয় কেয়ারী এলাকার অর্ধশতাধিক শ্রমিক সংগঠনের আন্দোলনের মুখে জেলা প্রশাসন ও গোয়াইনঘাট উপজেলা প্রশাসনের কর্তা ব্যাক্তিরা শেষ পর্যন্ত ঠিকে থাকতে পারবেনতো।