ডেইলি গোয়াইনঘাট ডেস্ক:- গোয়াইনঘাটে দিনদিন বৃদ্ধি পাচ্ছে চোরাকারবারিদের দৌড়াত্ম। চোরাকারবারিদের অর্থ লেনদেন সংক্রান্ত বিষয়ের রেশারেশিতে বলির পাটা হচ্ছেন উপজেলার অসহায় কৃষক সমাজ। এবার ঈদানন্দ মাটি করে অসহায়-দুস্থ কৃষকদের ৩২টি চোরাই গরু উদ্ধার করেছে গোয়াইনঘাট থানা পুলিশ। জাফলংয়ের একটি গ্রামের একজনের কাছে চোরাকারবারের পাওনা টাকার জের ধরে এসব কৃষকের গরু হাওর থেকে ধরে নিয়ে যাওয়ার ঘটনা ঘটে। এই ঘটনায় বাছুর ছাড়া ৩২টি গরু লুটে নেয় প্রতারক ঐ চোরা কারবারী। থানায় অভিযোগ দিলে গোয়াইনঘাট থানা পুলিশ ঘটনার ৪দিন পর কানাইঘাট থানা পুলিশের সহায়তায় কানাইঘাটের বিভিন্ন এলাকা থেকে অসহায় কৃষকদের এসব গরু উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসে।স্থানীয় ও পুলিশ সূত্রে জানা যায় গোয়াইনঘাট উপজেলার ৩নং পূর্ব জাফলং ইউনিয়নের শান্তিনগর এলাকার কামালের সাথে চোরা চালানের পাওনা টাকা নিয়ে বিরোধ বাঁধে উপজেলার ১০নং পশ্চিম আলীরগাঁও ইউনিয়নের গারো গ্রামের শহর উল্লাহর। চোরাচালানের এই টাকা নিয়ে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদে পাওনাদার শহর উল্লাহ বাদী হয়ে কামালের বিরুদ্ধে গ্রাম আদালতে মামলা করেন। মামলাটি বিচারাধীন থাকা অবস্থায় ১২ মে দুপুরে জাফলংয়ের বাওন হাওরে চড়ানো জাফলংয়ের বিভিন্ন গ্রামের অসহায় কৃষকদের ৩২টি গরু লুটে নিয়ে যায় চোরাকারবারী শহর উল্লাহ। গরু লুটে নিয়ে সে মোবাইল ফোনে এলাকার ঐ দেনাদার কামালসহ বিভিন্ন জনকে অবহিত করে। ঘরে দুগ্ধ পোষ্য ছোট্ট বাছুর রেখে হাওরে যাওয়া গাভীসহ লুন্ঠিত এই ৩২টি গরু গোয়াইনঘাট থেকে প্রতারক শহর উল্লাহ্ পাঠিয়ে দেয় তাহার শ্বশুড় বাড়ী কানাইঘাটের ফালজুর পূর্ব এলাকায়। সেখানে তার শালা দুলাল আহমদ গরু চোরদের সঙ্গবদ্ধ করে তা বিভিন্ন স্থানে বিক্রির পায়তারা করে প্রতারক শহর উল্লাহ। এ দিকে বিষয়টি জানার পর অসহায় কৃষকরা গোয়াইনঘাট থানায় ১২ মে রাত সাড়ে ১০টায় অভিযোগ দিলে লুন্ঠিত গরু উদ্ধারে নড়েচড়ে বসে টিম গোয়াইনঘাট পুলিশ।
বিষয়টির খবর পান সিলেটের পুলিশ সুপার ফরিদ উদ্দিন পিপিএমও। শুরু হয় পুলিশি তৎপরতা। অসহায় কৃষকদের লুন্ঠিত গরু উদ্ধারের জন্য বাতিল করা হয় ঈদের ছুটি। এরই মধ্যে গোয়াইনঘাটের সবকটি গ্রাম হন্যে হয়ে খোঁজেও কৃষকদের এসব গরুর কোন তথ্য পাওয়া যায়নি। ঘটনার পর গারো গ্রামের বাড়ী থেকে পালিয়ে যায় প্রতারক শহর উল্লাহ্সহ বাড়ীর লোকজন। সমাগত ঈদে কোন হদিস না পেলেও ঈদের দিন দিবাগত রাতে পুলিশের কাছে খবর আসে গোয়াইনঘাট থেকে লুন্ঠিত গরুগুলো কানাইঘাটে আছে। পুলিশ সুপারের নির্দেশে শনিবার থেকে শুরু হয় অভিযান। জড়িত অপরাধী গ্রেফতারের পাশাপাশি লুন্ঠিত গরু উদ্ধারে কৌশলে এগিয়ে যায় পুলিশ। গরু চুরির মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই মাসুম আলমের নেতৃত্বে গোয়াইনঘাট ও কানাইঘাট থানা পুলিশের যৌথ অভিযানে শনিবার রাতে কানাইঘাট থানা এলাকার বিভিন্ন স্থান থেকে লুট হওয়া এসব গরু উদ্ধারে সক্ষম হয় পুলিশ।
এ ঘটনায় জড়িত থাকার অপরাধে প্রতারক শহর উল্লাহ্র শালা দুলাল আহমদ (৩২) কে গরুসহ গ্রেফতার করে গোয়াইনঘাট থানায় নিয়ে আসে পুলিশ। গরু লুটের ঘটনায় নলজুরী গ্রামের ফারুক আহমদের দায়ের করা অভিযোগটি গোয়াইনঘাট থানায় (মামলা নং- ১৪) রুজু হয়। ১৯ জন এজাহার নামীয় এবং আরো অজ্ঞাত ২০/২৫ জনকে এই মামলায় আসামী করা হয়েছে। উদ্ধারকৃত গরু জব্দ করে স্থানীয়দের জিম্মায় দেয়া হয়েছে। এ ব্যাপারে কথা হলে গোয়াইনঘাট থানা অফিসার ইনচার্জ মোঃ আব্দুল আহাদ জানান,গোয়াইনঘাটের পূর্ব জাফলংয়ের এক ব্যবসায়ীর সাথে বিরোধের জের ধরে গারো এলাকার প্রতারক শহর উল্লাহ্র দ্বারা লুট হওয়া অসহায় কৃষকদের গরুগুলো গোয়াইনঘাট এবং কানাইঘাট থানা পুলিশের অভিযানে উদ্ধার করা হয়েছে।
এ ঘটনায় দুলাল আহমদ নামে একজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। অপরাপর জড়িত অপরাধীদের গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে। কৃষকদের লুন্ঠিত গরু ফিরিয়ে দিতে ও জড়িত অপরাধীদের দ্রুত গ্রেফতারে আমাদের সিলেটের পুলিশ সুপার নির্দেশিত ছকে অভিযান পরিচালনা করে আমরা গরু উদ্ধার ও অপরাধীকে গ্রেফতারে সক্ষম হই। উদ্ধারকৃত স্থানীয়দের জিম্মায় দেয়া হয়েছ। এ ঘটনায় দায়েরকৃত মামলায় দ্রত অপরাধীদে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে প্রেরণ করা হবে।
